Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১০ এপ্রিল ২০১৭

ভার্চুয়ালাইজেশন ! একধাপ এগিয়ে


প্রকাশন তারিখ : 2017-04-10

ভার্চুয়ালাইজেশন ! প্রচলিত সম্ভাব্য সকল কাজের সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার করেই একটা ভার্চুয়াল আবহ সৃষ্টি করা সম্ভব। আর এ কাজে বাড়তি রির্সোস ও তদসংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান ও বিরাজমান যে সুবিধাদি আছে তা কাজে লাগিয়েই ভার্চুয়াল আবহ সৃষ্টি করতে পারাটাই রোমাঞ্চকর।
সিরাজগঞ্জ জেলা কমান্ডান্ট হিসেবে আমি আমি খুবই উচ্ছ্বসিত যে সেখানে বছর ব্যপী দুটি প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত হয়- মোবাইল টেকনোলোজি এবং ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলোজি বিষয়ক। মোবাইল টেকনোলোজি বিষয়ক কোর্সে ২৪জন প্রশিক্ষণার্থি আসে সিরাজগঞ্জ সহ পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া ও জয়পুরহাট থেকে। আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সে ৩০জন প্রশিক্ষণার্থি আসে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে। পৃথক পৃথক ধাপে থাকে পুরুষ ও নারী প্রশিক্ষণার্থি । কোর্সে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণার্থিদের পারদর্শীতার দানের পাশা পাশি আমার ঐকান্তিক আগ্রহ কাজ করে তাদেরকে উদ্যোক্ত বানানোর দিকে। উদ্যোক্ত হওয়ার সাতে মিশে থাকে ইনোভেশন। কোর্স মডিউলে আমি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রায়োগিগ ক্ষেত্রগুলোতেই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করি। এ জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ কোর্সগুলো উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাত্রায় নিয়ে যেতে যে কোন ইনোভেশন- তা প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষণার্থি যার দিক থেকেই আসুক না কেন তা কাজে লাগাতে চেষ্টা করি।


আমার প্রশিক্ষকগণ, কোর্স ম্যানেজমেন্ট টীম এবং প্রশিক্ষণার্থিগণ সবাই জানেন, ভার্চুয়ালি কত স্বাচ্ছন্দ্যে আমি তাদের কাজে উপস্থিত হতে পারি। সিরাজগঞ্জ জেলা কমপ্লেক্স ওয়াই ফাই জোন। স্কাইপি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণার্থিদের ক্লাশ উপস্থাপন, উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে কথা বলা, কথা শোনা, মতবিনিময়, প্রশিক্ষকদের সাথে মত বিনিময় তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ আমার নৈমিত্তিক ব্যপার। খুব শীঘ্রি অনলাইন সুবিধাযুক্ত ক্যামেরাও সংস্থাপন হবে কমপ্লেক্সে।
আজ, ০৭ এপ্রিল, শুক্রবার সকাল ১০:০০টা থেকে ১১:১৫ পর্যন্ত মোবাইল টেকনোলোজি বিষয়ক কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান করলাম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। ও প্রান্তে ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জনাব গোলাম মওলা, উপজেলা আনসার-ভিডিপি অফিসার, সদর। আমার বক্তব্য ছিল, সদর  অফিসার বক্তব্য রাখলেন, প্রশিক্ষণার্থিদের মধ্যে পাবনার আটঘোরিয়া উপজেলা থেকে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থি মোঃ রেজাউল। মোবাইল টেকনোলোজি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে, নানান প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয়ে এবং প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার দেখে তারা চমকৃত। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ তাদের একটি সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার প্রত্যাশায়। নিজে উদ্যোক্ত হয়ে আত্ম কর্মসংস্থান করা এবং কমিউনিটির তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করা ও তাদের জন্যও উপার্জনের দুয়ার উন্মুক্ত করা। প্রশিক্ষণার্থিদের পক্ষথেকে প্রণিধানযোগ্য কয়েকটি আবেদন এসেছে যেমনঃ
⦁    প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৩৫দিন থেকে যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি
⦁    প্রশিক্ষণ শেষেই কাজে লেগে যাবার উপযোগি যন্ত্রপাতি অনুদান হিসেবে দেওয়া
⦁    ক্ষুদ্র উদ্যোক্ত হওয়ার প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় মূলধন প্রাপ্তিতে সহায়তা।
এ আবেদনগুলোর সাথে আমিও একমত। মোবাইল ফোন আর বাটনযুক্ত ক্ষুদ্র মোবাইল ফোন নেই। সে গুলো প্রযুক্তির দ্রুত এবং ক্রমবর্ধমান ধারায় হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারে অতিদ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধাসহ মোবাইল ফোনসেট সর্বসাধারনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এবং সহজলভ্য। দুই হাজার বা তার কম টাকায় এখন স্মার্ট ফোন পাওয়া যাচ্ছে। মোবাইল ফোন আর কেবল ফোন নেই, যুক্ত হয়েছে কম্পিউটারের নানান ফিচার। মানে ছোটখাট কম্পিউটারই বলা চলে। সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে উচ্চ রেজুলেশনের ক্যামেরা যাতে স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ করা যাচ্ছে অতি সহজেই। সেগুলো ধারণ ও সংরক্ষণের জন্য উচ্চধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মেমোরি স্টিক, এক্সটারনাল সংরক্ষনের জন্য ও দ্বৈত ব্যবহারের জন্য এসেছে ওটিজি ফ্লাশ ড্রাইভ। ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ইন্টারনেটের ব্যপ্তি তো আছেই। আছে অনলাইনে অসংখ্য স্টোরেজ। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের পরিসর বেড়েছে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমেই। সামাজিক যোগাযোগের সহজ সাধ্যতা প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের নিয়ত ইন্টারনেট সম্পৃক্ততা বাড়ছে। জীবন যাত্রা সহজ করার জন্য চালু রয়েছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে অগণিত অ্যাপস যা দিয়ে, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকুরী, ভ্রমন, ব্যবসা বানিজ্য, কেনাকাটা, ব্যাংকিং, বিনোদন ইত্যাদি নানাবিধ সেবা চলে আসছে হাতের মুঠোয় এবং বেড়ে চলেছে ব্যবহার কারী বা সুবিধাভোগী। স্মার্টফোনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর মধ্যে হার্ডওয়্যারের চেয়ে সফটওয়্যার বিষয়ক জ্ঞানার্জন তাই পিছিয়ে নেই।
মোবাইল ফোন সংক্রান্ত এ প্রশিক্ষণের নামকরণ ’সার্ভিসিং বা রক্ষণাবেক্ষণ’ পরিবর্তনের দাবী রাখে। মোবাইল টেকনোলি বিষয়ক সুন্দর কিছু নামকরণ হওয়া বাঞ্ছণীয়। আর সেই সাথে সম্ভাব্য সকল ধরণের অ্যাপস সম্পর্কিত বিষয়াদি সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। বিভিন্ন এক্সেসরিজ সম্পর্কে প্রায়োগিত ধারণা এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির ধাপ ও ক্ষেত্র সমূহ সম্পর্কেও মডিউল ডেভেলপ করা  ও কোর্সের অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আর এত কিছুর অন্তর্ভূক্তি নিঃসন্দেহে কোর্সের জন্য সময় বৃদ্ধির দাবীকে যৌক্তিক করে তোলে।

প্রশিক্ষণার্থির দ্বিতীয় আবেদন, অনুদান হিসেবে কাজ শুরুর উপযোগি যন্ত্রপাতির একটা প্যাকেজ প্রশিক্ষণ শেষে সকল প্রশিক্ষণার্থিকে প্রদান। সেলাই প্রশিক্ষণার্থিদের সবাইকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয় যাতে প্রশিক্ষণার্থিগণ ফিরে গিয়েই উপার্জনমূখী কাজে নামতে পারে। ১০-১২ বছর আগে সবাইকে সেলাই মেশিন দেওয়া হতো না। কাল পরিক্রমায় এর গুরুত্ব অনুধাবিত হয়েছে এবং ১০০% প্রশিক্ষণার্থিকে মেশিন দেওয়ার নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি পা চালিত সেলাই মেশিন ষ্ট্যান্ডসহ আনুমানিক দাম দশ হাজার টাকা। কমিউনিটি লেভেলে প্রশিক্ষণসহ সেলাই মেশিন প্রাপ্ত একজন তরুণী তার পারিবারিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সক্ষম হচ্ছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। একই প্রেক্ষাপটে মোবাইল টেকনোলোজিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের একসেট যন্ত্রপাতি দিতে জনপ্রতি ১হাজার টাকার বেশী লাগবে না। কিন্তু এর ফলাফল হবে ব্যপক। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনকারীদের ক্লায়েন্টের অভাব নেই। কাজ শুরু করতে পারে প্রশিক্ষণ থেকে ফিরে গিয়েই।

তৃতীয় বিষয়টি ছিল উদ্যোক্ত হওয়ার জন্য পূঁজির সংস্থান। যে সব তরুণ প্রশিক্ষণ নিতে আসে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। সার্মথ্য তাদের সীমিত। একজন উদ্যোক্তা হতে যে সব উপকরণ অতিগুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে সর্বাগ্রে আসে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন, যা আমাদের প্রশিক্ষণ তাদের দিচ্ছে। তার পরেই আসে বিনিয়োগ। দক্ষতা ও সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কোন সমস্যা নয়। আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক এ ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হতে পারে। যেহেতু সব উপজেলাতে এখনও এ ব্যাংকের শাখা নেই সেহেতু অন্য যে কোন তপশীলি ব্যাংকের সহায়তাও নেওয়া যায়। অধিকন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং অনুরূপ সরকারী বেসরকারী প্রকল্পও এ তরুণদের জন্য ভরসার ক্ষেত্র হতে পারে।


প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে যাবার পর প্রশিক্ষণার্থিদের সাথে যোগাযোগ রাখি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সিরাজগঞ্জ জেলার একটি পেইজ রয়েছে। প্রায় সবাইকেই সে পেইজে যুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ পরবর্তী যে কোন জিজ্ঞাসার সমাধান দেওয়া, তাকে প্রোমোট করার জন্য নানন পরামর্শ দেওয়া এবং তাদের সফলতার কাহিনী তুলে ধরার জন্য এ পেইজটি খুবই সহায়ক।
কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে আমার পক্ষে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন জনাব গোলাম মওলা। সকল প্রশিক্ষণার্থিকে সনদপত্র ও একটি করে ছোট টুলবক্স দেয়া হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানটি আরও মনোজ্ঞ করতে আমার ক্লাশ টু তে পড়ুয়া কন্যা এ্যরিশা একটি মজার গান নিজে হারমনিয়াম বাজিয়ে পরিবেশন করে। প্রশিক্ষণার্থিরা হাততালি দিয়ে এ্যরিশা মনিকে অভিনন্দিত করে।